সরকারি চাকরিতে প্রতিবছরই ছুটি জমা হতে থাকে- এভাবে জমা হতে হতে সমগ্র চাকরিজীবনে ৫ বছর পর্যন্ত ছুটি জমা হয় – সরকারি কর্মচারীদের ছুটির হিসাব
এক বছরে কত দিন ছুটি জমা হয়?–সরকারি কর্মচারীগণ নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ ছাড়াও বছরে ৩৩ দিন পূর্ন গড় বেতনে এবং ৩০ দিন অর্ধ গড় বেতনে ছুটি ভোগ করে থাকে। এ ছুটি ভোগ করার পর অবশিষ্ট ছুটি অবসর গ্রহণের সময় ১৮ মাস পর্যন্ত বিক্রি বা নগদায়ন করে থাকেন। সাধারণত আমরা নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে ছুটির হিসাব বের করি কিন্তু আজ আমরা সূত্রের মাধ্যমে অর্জিত ছুটি হিসাব কিভাবে করে তা বের করবো।
সরকারি কর্মচারি ছুটি বীধিমালা অনুসারে আমরা অনেকেই এটা জানি যে একজন স্থায়ী কর্মচারির প্রতি ১১ দিনে ১ দিন পূর্ণগড় বেতনে আর ১২ দিনে ১ দিন ১ দিন অর্ধ -গড় বেতনে ছুটি তার ছুটির হিসাবে জমা হতে থাকে । যদিও পূর্ণ গড় বেতনের ক্ষেত্রে ৪ মাস পর্যন্ত ছুটি তার হিসাবে জমা হয়, ৪ মাসের অধিক হলে তা আলাদাভাবে হিসাব রাখা হয়। এ বিষেয় অন্য কোন পোস্টে আলচোনা করব আজ শুধুমাত্র কীভাবে অর্জিত ছুটির পরিমান হিসাব করতে হয় তা উদাহরনের মাধ্যমে বোঝানর চেষ্টা করব। অর্জিত ছুটির পরিমান হিসাব করতে হলে প্রথমেই আপনাকে একজন কর্মচারির ছুটির আবেদনের তারিখ বা অবসরে যাওয়ার তারিখ এর মধ্যে মোট চাকুরীকাল হিসাব করতে হবে। সহজ কথায় যে সময়ের মধ্যে অর্জিত ছুটির পরিমান হিসাব করতে চান সে সময়কালটা বের করতে হবে । এর জন্য তার যোগদানের তারিখ ও ছুটির আবেদনের তারিখ বা অবসরের তারিখটি জানতে হবে। এরপর উক্ত সময়কালেক দিনে রুপান্তরিত করে পূর্ন গড় বেতনের ক্ষেত্রে ১১ দিয়ে আর অর্ধ গড় বেতনের ক্ষেত্রে ১২ দিয়ে ভাগ করে ছুটির পরিমান হিসাব করতে হবে। এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে যে উক্ত সময়কালের মধ্যে যদি সংশ্লিষ্ট কর্মচারি কখনও বিনা বেতনে ছুটি বা নির্দিষ্ট কোন অপরাধে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাসপেন্ড থাকেন যে সময়ে তিনি কোন বেতন পান নাই তাহলে উক্ত সময়িট তার হিসাবকৃত চাকুরীকাল হতে বাদ দিতে হবে। মোদ্দা কথা তিনি যে সময়টাতে বেতন পাবেন না তা হিসাব হতে বাদ দিতে হবে।পিআরএল ছুটির হিসাব । অর্জিত ছুটির নীতিমালা বা নিয়ম কি জেনে নিন
অর্ধ গড় বেতনে ছুটির হিসাব ৪ মাসের অধিক জমা হবে না। কারণ সাধারণ অর্ধ গড় বেতনে ৪ মাসের অধিক ছুটি কাটানো যায় না। যদিও চিকিৎসা জণিত কারিণে ৬ মাস পর্যন্ত কাটানো যায়।Caption: Leave Rules 1959
সার্ভিস বুকে ছুটির হিসাব লেখার নিয়ম ২০২৪ । গড় বেতনে অর্জিত ছুটি কিভাবে এন্ট্রি করতে হয় দেখুন
- ধাপ-১। কলাম ২ ও ৩ এ কর্মকাল লিখতে হবে। যেমন ৫-৪-২০১৩ হইতে ১৬-০৪-২০১৩ পর্যন্ত লেখা হয়েছে। ১৬-০৪-২০১৩ তারিখ হতে ৫-৪-২০১৩ তারিখ বিয়োগ করে ১১ দিন কর্মকাল পাওয়া গেছে যা ৪ নম্বর কলামে ব-ম-দি তে দিনের ঘরে লেখা হয়েছে।
- ধাপ-২। কলম-৫ ও ৬ তে কলাম ৪ এ পাওয়া দিনকে ভাগ করে গড় বেতনে ছুটি ও অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বের করে লিখতে হবে। যেমন এখানে ১১ দিনকে ১১ দিয়ে ভাগ করে গড় বেতনে ছুটি এবং ১২ দিয়ে ভাগ করে অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বের করতে হবে। এখানে গড় বেতনে ছুটি ১ দিন পাওয়া গেছে যা ৫ নম্বর কলাম এবং ১২ দিয়ে ভাগ করে ১ এর কম পাওয়া গেছে তবু ১ লেখা হয়েছে। মনে রাখবেন ০.৫ বা অর্ধাংশ বা তার উপরে আসলে ১ দিন ধরার নিয়ম রয়েছে।
- ধাপ-৩। কলাম ৯ ও ১০ এ পূর্বের জের বা ব্যালেন্স ছুটির সাথে ৫ ও ৬ কলামের ছুটি যোগ হয়ে দেখাতে হবে। যেমন ১ বছর ৯মাস ৫ দিনের সাথে ১ দিন যোগ হয়ে ১ বছর ৯ মাস ৬ দিন লেখা হয়েছে ৯ নম্বর কলামে এবং অর্ধ গড় বেতনে জমা ১ বছর ১০ মাস ২১ দিনের সাথে ১ দিন যোগ হয়ে ১ বছর ১০ মাস ২২ দিন লেখা হয়েছে ১০ নম্বর কলামে।
- ধাপ-৪। কোন প্রকার ছুটি কাটিয়ে থাকলে তা ১১ নম্বর কলামে লিখতে হয়। যেমন-এখানে ১৭-০৪-২০১৩ তারিখ হতে ১২-০৫-২০১৩ তারিখ পর্যন্ত ২৬ দিন গড় বেতনে অর্জিত ছুটি কাটানো হয়েছে তা লিখে ১২ নম্বর কলামে ২৬ দিন দেখানো হয়েছে। যদি ৪০ দিন কাটানো হত তবে মাসের ঘরে ১ মাস দিনের ঘরে ১০ দিন লিখতে হতো। মোট কথা ১১ ও ১২ কলামে ছুটি দেখাতে হবে। যে প্রকার ছুটি এখানে দেখানো হবে সেই প্রকার ছুটি হতে এ ছুটি বাদ যাইবে।
- ধাপ-৫। কলাম ১৪ থেকে ২০ কলামের আগ পর্যন্ত ছুটির ধরন বড় করে লিখবেন। যে সকল ছুটি (Leave) ছুটি হিসাবে ডেবিট হয় না।
- ধাপ-৬। কলাম ২১ ও ২২ এ গড় বেতনে ছুটি ও অর্ধ গড় বেতনে ছুটির ব্যালেন্স দেখাতে হয়। এখানে ৯ ও ১০ নম্বর কলামে দেখনো ছুটির ব্যালেন্স হতে কাটানো ২৬ দিন ছুটি বাদ দিবো। যেহেতু গড় বেতনে ছুটি তাই ৯ নম্বর কলামে দেখানো ছুটি হতে বাদ দিবো। যে প্রকার ছুটি কাটানো হবে সেই প্রকার ছুটি হতে বাদ দেওয়া হবে। ৯ নম্বর কলাম হতে ২৬ দিন ছুটি বাদ দিয়ে ২১ নম্বর কলামে ১ বছর ৮ মাস ৯ দিন ছুটি দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে ১০ নম্বর কলামের অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বা মেডিকেল ছুটি যেমন আছে ২২ নম্বর কলামে তেমনই বসানো হয়েছে অর্থাৎ ১ বছর ১০ মাস ২২ দিন।
অসাধারণ ছুটি ছুটির হিসাব হতে বাদ যায় না?
সার্ভিস বুক বা খতিয়ান বহিতে অসাধারণ ছুটি এন্ট্রি করতে হবে। কিন্তু মোট অর্জিত ছুটি তা গড় বেতনে বা অর্ধ গড় বেতনে যে ছুটিই থাকুক না কেন তা হতে এ ছুটি বিয়োগ হবে না। অর্জিত ছুটি মূলত জমা না থাকলে অসাধারণ ছুটি বা বিনা বেতনে ছুটির আবেদন করে মঞ্জুর করা যায়। অন্য দিকে শাস্তি স্বরপ অন্য ছুটি জমা থাকা সত্বেও নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে কর্তৃপক্ষ অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করতে পারে। অসাধারণ ছুটি অবশ্যই নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করবে। অসাধারণ ছুটির কারণে পেনশযোগ্য চাকরিকাল পিছিয়ে যায় কিন্তু এতে জেষ্ঠ্যতা ক্ষুন্ন হয় না। উপরের চিত্রে দেখুন অসাধারণ ছুটি এন্ট্রি করা হয়েছে কিন্তু কোন প্রকার ছুটি হতে বাদ যায়নি। এ ছুটি এন্ট্রি না করলেও চলবে।
https://bdservicerules.info/%E0%A6%85%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%9B%E0%A7%81%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AC/
Comments