ডেংগু জ্বর ও করনীয়ঃ

ডেংগু জ্বর ও করনীয়ঃ
-----------------------------------
লক্ষণঃ  হঠাৎ করে প্রচন্ড জ্বর দিয়ে শুরু হয়। ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত। সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। সাথে থাকতে পারেঃ
*মাথাব্যথা 
*প্রথম দুই দিনে মুখে,গলায়, ঘাড়ে  লালচে ভাব, এরপর ৩- ৪ দিনের মাথায় লালচে র‍্যাশ। জ্বর সারতে থাকার সময় হাত ও হাতের তালু, পা এবং পায়ের তলাতে হাল্কা চুলকানো সহ র‍্যাশ। 
*চোখের পিছনে বা চোখ নাড়াচাড়া করলে বা প্রেসার দিলে ব্যথা
*আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা
*মেরুদণ্ড / মাংসপেশী ও হাড়ে,ব্যথা
*এছাড়া ক্ষুধামান্দ্য, পায়খানা কষা হওয়া, পেট ব্যথা হতে পারে।

# উল্লেখ্য যে এই লক্ষ্মণগুলো রোগী ভেদে যথেষ্ট ভিন্ন হতে পারে। 
রোগীকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যান।
আপনার ডাক্তার আপনাকে এই পরীক্ষাগুলো করতে দিবেন জ্বর এর ৩ দিনের মধ্যেঃ 
CBC, Hematocrit, NS1 antigen, SGOT, SGPT

এই পর্যায়ে আবশ্যকীয়  চিকিৎসাঃ

* পূর্ণ বিশ্রাম ( bed rest) 
* পর্যাপ্ত তরল খাবার যেমন দুধ/ ফলের রস / সুপ/ ডাবের পানি/ ভাতের মাড় - একজন পূর্ণ বয়ষ্ক মানুষের জন্য ২৫০ মিলি গ্লাসের ৬ গ্লাসের বেশি। বাচ্চাদের জন্য ৩ থেকে ৫ গ্লাস মিনিমাম। বয়স অনুযায়ী। 
সতর্কতাঃ শুধু পানি অতিরিক্ত খেলে শরীরে লবন চিনির ভারসাম্য ব্যহত হবে তাই তরল খাবার খেতে  হবে।
* কুসুম গরম পানিতে শরীর বারবার মুছে দিতে হবে।
* শরীরের তাপমাত্রা অবশ্যই ১০২ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর নিচে রাখতে হবে। এ জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল। ( নাপা/ এইস) প্রতি ট্যাবলেট এ ৫০০ মিলিগ্রাম আর সিরাপে ৫ মিলিতে ১২০ মিলিগ্রাম থাকে) 

পূর্ণবয়ষ্কঃ ১০ -  ১৫ মিলিগ্রাম /কেজি/ ডোজ ৬ ঘন্টা পরপর ভরা পেটে। মানে ৫০ কেজির মানুষ খাবে এক থেকে দেড় ট্যাবলেট আর ৯০ কেজির মানুষ খাবে ২ টি ট্যাবলেট প্রতি ডোজে। দিনে ৪ বারের বেশি নয়।

১২ বৎসরের নিচে শিশুঃ 
১ বছর বয়সঃ এক থেকে দেড় চা চামচ
১ থেকে ৪ বছর বয়সঃ দেড় থেকে দুই চা চামচ
৫ বছর বয়সঃ দুই থেকে আড়াই চা চামচ
এরপর ১৫ মিলিগ্রাম / কেজি / ডোজ হিসাবে দিতে হবে ৬ ঘন্টা পর পর, মোট ৪ বারের বেশি নয়।

# কোন অবস্থাতেই ক্লোফেনাক ( voltalin) / এসপিরিন/ আইবুপ্রোফেন / স্টেরয়েড জাতীয় ব্যথানাশক বা জ্বরনাশক ঔষধ দেওয়া যাবে না।

# সতর্কতার সাথে রোগীর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে কারন পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে ডেংগু রোগ দ্রুত জটিল আকার ধারণ করতে পারে।রোগীর জ্বর সেরে যাওয়ার পর পরবর্তী দুই দিন খুব ভালভাবে  লক্ষ্য রাখতে হবে।

# নিচের যেকোনো লক্ষ্মণ দেখা দিলে সাথে সাথে নিকটবর্তী চিকিৎসক / হাসপাতালে নিতে হবে তা না হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা হতে পারেঃ

*শরীরের যেকোনো স্থান থেকে রক্তপাত যেমন চামড়ার নিচে লাল দানা ( রক্তবিন্দুর মত) অথবা তার চাইতে একটু বড় /নাক বা মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ / রক্তবমি/ কালো পায়খানা /অতিরিক্ত মাসিক বা যোনীপথ এ রক্তক্ষরণ। 
* অতিরিক্ত বমি অথবা কিছু পান করতে না পারা
* প্রচন্ড পেট ব্যথা 
* আচরণগত পরিবর্তন / ঝিমুনি / খিঁচুনি / অতিরিক্ত কান্না/ ঘুম ঘুম ভাব
* হাত পা এর তলা ফ্যাকাসে ঠান্ডা ভিজা ভাব
* শ্বাসকষ্ট 
*বসা বা শোয়া থেকে দাঁড়ালে মাথা ঘুরানো
* ৪ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে প্রসাব না হওয়া।

Reference : National Guideline for Clinical Management of Dengue Syndrome 
4th Edition 2018.

এরপর মারাত্মক ডেংগু এর চিকিৎসার  দ্বায়িত্ব চিকিৎসক এর। সর্বাবস্থায় মনে রাখতে হবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ জ্ঞান আর সেবাটুকু দিয়ে রোগীর জীবন রক্ষার চেষ্টা করব। কিন্তু আমরা রোগের চিকিৎসা করি, মৃত্যুর নয়। অধিকাংশ রোগীই সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন আবার আমাদের সহকর্মী, তাদের সন্তানরাও ডেংগুতে মারা যাচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে আমাদেরও হাতে কিছু থাকে না। তাই পরম করুনাময় এর উপর ভরসা রেখে আমাদের নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে নিরাপদে চিকিৎসা করার পরিবেশ বজায় রাখবেন এটুকুই প্রার্থনা। 
(Collected from Rouf Momen.)
@
ডাক্তার শাওলী সরকার 
সহকারী অধ্যাপক 
ঢাকা শিশু হাসপাতাল
শের- ই - বাংলা নগর, ঢাকা।

Comments